• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিএনপি নেতা নান্নু হত্যা : আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া মানুষ

  • ''
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২৪

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:

ঘড়ির কাটায় সকাল ১১ টা বেজে ২ মিনিট। প্রাক - প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির কক্ষে ঝুলছে তালা। দ্বিতীয় শ্রেণির কক্ষে পাঁচজন শিক্ষার্থী বসে আছে। আর শিক্ষক কক্ষে বসে আছেন পাঁচজন শিক্ষক। সুনসান নিরবতা। কোনো কার্যক্রম নেই। মঙ্গলবার ( ১৯ মার্চ) কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে এচিত্র দেখা যায়।

এসময় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী স্নেহা খাতুন ( রোল ১) বলে, এলাকায় একজন মারা গেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ বসে আছে। ভয়ে কেউ স্কুলে আসেনা। তাঁর ভাষ্য, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৬ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন এসেছে।

সহকারী শিক্ষক রুনা আক্তার জানান, সম্প্রতি এলাকায় একটি হত্যাকা- ঘটেছে। সেজন্য হামলা ও মামলার ভয়ে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। থমথমে পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা আসেনা। কিন্তু চাকুরির ভয়ে আমরা প্রতিদিনই এসে বসে থাকি।

দুপুরে ফোনে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আজিবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৬ জন। কিন্তু আজ উপস্থিত হয়েছে মাত্র ১৪ জন। তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়াতে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে গত ১৪ মার্চ যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম ওরফে নান্নুকে (৪৫) হত্যা করে প্রতিপক্ষ। পুলিশ রাতে ওই গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

আরো জানা গেছে, হত্যাকান্ডর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন রাতেই নিহত নান্নুর সমর্থকরা বেশকিছু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট করে। এসব ঘটনায় কুমারখালী থানায় দুইটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সরেজমিন উত্তর চাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। বেশকিছু ঘর - বাড়িতে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের চিহৃ রয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি পুরুষ শূণ্য। গৃহপালিত পশু - পাখি নেই। অনেকটা সুনসান ও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এসময় আসামি পক্ষের আব্দুল মালেকের স্ত্রী ভানু খাতুন জানান, তাঁর বাড়ির কেউ আসামি কি না?  তা তিনি জানেন না। কিন্তু ভয়ে ঘটনার দিনই তাঁদের পক্ষের সকল পুরুষ পালিয়েছে। আর প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁদের গরু, ছাগল ও ঘরের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ দেওয়ারও অভিযোগ করেন তিনি।

তবে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেন হত্যা মামলার বাদী জহুরুল ইসলাম। তিনি জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে তাঁর ভাইকে প্রতিপক্ষের লোকজন নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তিনি স্ষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছেন। তদন্ত সাপক্ষে প্রকৃত দোষীদের ফাঁসি চান তিনি।

যদুবয়রা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. আজাদ খান জানান, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হত্যা ও ভাংচুরের ঘটনায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে থানায়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাঁর সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads